কক্সবংলা ডটকম :: ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার ফাইনাল দিয়ে পর্দা নামল নবম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের। এ আসরে চমক দেখানো দুটি দল হলো যুক্তরাষ্ট্র ও আফগানিস্তান। যুক্তরাষ্ট্রের দৌড় সুপার এইটে শেষ হলেও আফগানরা ইতিহাস গড়ে সেমিফাইনালে উঠে।
শেষ চারের লড়াইয়ে অবশ্য পরাশক্তি দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে বড় ব্যবধানে হেরে যায় রশিদ খানের দল। এ হারেও তাদের কীর্তি ম্লান হবে না। প্রথমবারের মতো কোনো বৈশ্বিক আসরের সেমিফাইনাল খেলে ইতিহাস গড়েছেন রশিদ, নবিরা।
দলটিকে বিশ্বমঞ্চে গৌরবের আসনে নিয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছে পুরো দল। এর মধ্যে অগ্রগণ্য ব্যাট হাতে রহমানউল্লাহ গুরবাজ, ইব্রাহিম জাদরান এবং বল হাতে ফজলহক ফারুকি, রশিদ খান ও নবীন-উল-হক। সেমিফাইনাল পর্যন্ত রান ও উইকেট চার্টে শীর্ষে ছিলেন আফগানিস্তানের দুই খেলোয়াড়।
গতকাল ফাইনাল পর্যন্ত রান ও উইকেট শিকারের চার্টে শীর্ষ দুটি নাম ছিল আফগানদের! বিস্ময়কর ও অসাধারণ কীর্তি। রহমানউল্লাহ গুরবাজ ৮ ম্যাচে ২৮১ রান করে ১ নম্বর স্থানে ছিলেন। আর উইকেটের শীর্ষে ছিলেন তারই সতীর্থ পেসার ফজলহক ফারুকি। ভারতের খেলোয়াড়দের কাছে দুটি পজিশনই হারানোর শঙ্কা ছিল, আবার দুটিই টিকে যেতে পারে।
কলকাতা নাইট রাইডার্সে ওপেনিং ব্যাটার ও উইকেটকিপার হিসেবে খেলা গুরবাজ ছিলেন বিশ্বকাপে আফগান অভ্যুত্থানের অন্যতম নায়ক। ইব্রাহিম জাদরানকে নিয়ে জমাট এক ওপেনিং জুটি গড়ে তোলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুপার এইটের ম্যাচের কথাই ধরুন।
আগে ব্যাট করতে নেমে জাদরানকে নিয়ে ১৫.৫ ওভারে ১১৮ রান তুলে তারা দলকে ভালো সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন। পরে ১৪৮ রানের পুঁজি নিয়ে তারা অজিদের হারিয়ে দেয়। টুর্নামেন্টজুড়েই প্রতিপক্ষকে হতাশ করে গেছেন গুরবাজ ও জাদরান।
দীর্ঘ সময় এ দুজনই যথাক্রমে এক ও তিনে অবস্থান করেছেন। সেমিফাইনাল শেষে তাকে চারে ঠেলে দিয়ে তিনে উঠে গেছেন ভারতীয় দলনায়ক রোহিত শর্মা। আফগানিস্তান বিদায় নেয়ায় গুরবাজের আর রান করার সুযোগ নেই। তাই শীর্ষস্থানটিও তার এখন হুমকির মুখে।
শীর্ষস্থানধারী গুরবাজকে টপকে এক নম্বরে উঠতে রোহিতকে ফাইনালে করতে হতো ৩৪ রান। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এ ডানহাতি ব্যাটার হয়তো সেটি করেও ফেলেছেন। সর্বশেষ দুই ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪১ বলে ৯২ ও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯ বলে ৫৭ রান করেছেন রোহিত। কাজেই গুরবাজকে টপকে রানচার্টের শীর্ষে ওঠার যোগ্য দাবিদার ছিলেন তিনি। এখানে তার প্রতিদ্বন্দ্বীও কম। দুইয়ে থাকা ট্রাভিস হেডের দল অস্ট্রেলিয়া সেমির আগেই বিদায় নিয়েছে।
জাদরান, ওয়েস্ট ইন্ডিজের নিকোলাস পুরান, যুক্তরাষ্ট্রের আন্দ্রি গুস ও ইংল্যান্ডের জস বাটলার টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার কুইন্টন ডি কক ২০৪ রান করে রোহিতের চেয়ে ৪৪ রান পিছিয়ে রয়েছেন। যদি এমন হয়, রোহিত শূন্য রানে আউট হলেন, তখন ডি কক ৭৮ রান করলে চার্টের শীর্ষে উঠে যাবেন। দক্ষিণ আফ্রিকার ড্যাশিং এ ওপেনিং ব্যাটার পেরেছেন কি?
শীর্ষ দশে আছেন ভারতের সূর্যকুমার যাদবও। সেমিফাইনালে ৩৬ বলে ৪৭ রান করে তিনি চার্টের শীর্ষ দশে ঢুকে পড়েন। ফাইনালের আগ পর্যন্ত ১৯৬ রান করে চার্টের নয় নম্বরে অবস্থান করছিলেন তিনি।
বাংলাদেশের হয়ে এ বিশ্বকাপে সবচেয়ে বেশি রান করেছেন তাওহীদ হৃদয়। ৭ ম্যাচে ১৫৩ রান করে তিনি রয়েছেন চার্টের ১৫ নম্বরে।
বোলিংয়ে অবশ্য শীর্ষ দশে আছে বাংলাদেশ, ফাইনাল পর্যন্ত ছিল শীর্ষ পাঁচেও। লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন ৭ ম্যাচে ১৪ উইকেট শিকার করে তালিকার চারে অবস্থান করছিলেন। সুপার এইটে আফগানদের বিপক্ষে ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি।
ওই ম্যাচেই ৪ উইকেট নিয়ে রিশাদকে ধরে ফেলেন আফগান দলনায়ক রশিদ খান। তবে শ্রেয়তর ইকোনমি রেট ও গড় নিয়ে তিনি রিশাদকে টপকে তিনে অবস্থান করছিলেন। এছাড়া বাংলাদেশের তানজিম হাসান সাকিব ১১ উইকেট, তাসকিন আহমেদ ও মুস্তাফিজুর রহমান প্রত্যেকেই ৮ উইকেট শিকার করেছেন।
রিশাদ ও তানজিমের অর্জন নিয়ে বাংলাদেশ দলের সহঅধিনায়ক তাসকিন আহমেদ শুক্রবার ঢাকায় ফিরে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘তানজিম সাকিব, রিশাদ ওরা সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিদের মধ্যে ছিল, সেরা পাঁচে ছিল। রিশাদ এখনো আছে। সব মিলিয়ে ভালো করেছে। এটা খুবই ইতিবাচক যে বাংলাদেশ থেকে ভবিষ্যতের তারকারা উঠে আসবে। এর মধ্যে বিশ্বকে বোঝানো হয়েছে যে আমাদের সবার মধ্যে বিভিন্ন সামর্থ্য আছে।’
উইকেট শিকারের চার্টে শীর্ষ দুটি স্থানে ছিলেন আফগানিস্তানের পেস বোলার ফজলহক ফারুকি ও ভারতের আর্শদীপ সিং। আফগানিস্তান না থাকায় ফাইনালে তিন উইকেট নিয়েই ফারুকিকে টপকে যাওয়ার সুযোগ ছিল আর্শদীপের। শীর্ষস্থান দখলে নিতে বুমরাহর প্রয়োজন ছিল ৫ উইকেট।
দক্ষিণ আফ্রিকার পেসম্যান এনরিখ নরকিয়া ১৩ উইকেট, কাগিসো রাবাদা ১২ উইকেট ও তাবরাইজ শামসি ১১ উইকেট শিকার করেছেন। ভারতের কুলদীপ যাদব টিম কম্বিনেশনের কারণে মাত্র ৪ ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন, তাতেই শিকার করেছেন ১০ উইকেট! তবে গতকাল ফাইনালে শীর্ষ দশ কিংবা শীর্ষ পাঁচে ঢুকে পড়ার সুযোগ ছিল তার।
২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন জাসপ্রিত বুমরাহ। পাশাপাশি কিপটে বোলিংয়ের সুবাদে ভারতের ডানহাতি পেসার গড়লেন রেকর্ড। বিশ্বকাপের এক আসরে অন্তত পাঁচ ইনিংসে হাত ঘোরানো বোলারদের মধ্যে তার চেয়ে কম ইকোনমি নেই আর কারও।
এবারের আসরে বুমরাহর বল থেকে রান বের করে আনা রীতিমতো দুঃসাধ্য ছিল প্রতিপক্ষের ব্যাটারদের জন্য। ৮ ম্যাচ খেলে মাত্র ৮.২৬ গড়ে তিনি ১৫ উইকেট শিকার করেন। তার প্রতি ওভার থেকে গড়ে আসে স্রেফ ৪.১৭ রান। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের পিচ থেকে সহায়তা মিললেও টি-টোয়েন্টির ধুন্ধুমার ব্যাটিংয়ের এই যুগে এমন ইকোনমি বিস্ময়কর। বুমরাহর আগে সর্বনিম্ন ইকোনমির এই রেকর্ড ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্পিনার সুনিল নারাইনের দখলে। তিনি ২০১৪ সালের আসরে প্রতি ওভারে গড়ে কেবল ৪.৬০ রান দিয়েছিলেন।
শনিবার বার্বাডোজে রোমাঞ্চকর ফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে ভারতের দ্বিতীয়বারের মতো টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে বুমরাহ রাখেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। আরও একবার বল হাতে আঁটসাঁট থেকে ৪ ওভারে ১৮ রান খরচায় তিনি নেন ২ উইকেট। অর্থাৎ তার ইকোনমি ছিল মোটে ৪.৫০।
আসরের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার নিতে এসে বুমরাহ তুলে ধরেন তার অনুভূতি, ‘আমি এমন একজন মানুষ যে সাধারণত তার আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখার ও দায়িত্বটা ঠিকভাবে সম্পন্ন করার চেষ্টা করে। কিন্তু আজ (শনিবার) আমার কাছে (অনুভূতি প্রকাশের জন্য) পর্যাপ্ত শব্দ নেই। আমি সাধারণত খেলার পরে কাঁদি না। তবে (এখন) আবেগ আমাকে ভাসিয়ে নিচ্ছে। আমরা বিপাকে ছিলাম। তবে সেই পরিস্থিতি থেকে (ঘুরে দাঁড়িয়ে) জেতার জন্য আমরা ভীষণ আনন্দিত।’
নিজের প্রথম দুই ওভারে ১২ রান দিয়ে ১ উইকেট পাওয়া বুমরাহ আক্রমণে ফেরেন ১৬তম ওভারে। তখন ১৭৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় নামা দক্ষিণ আফ্রিকার দরকার ছিল ৩০ বলে ঠিক ৩০ রান। হাতে ছিল ৬ উইকেট। অর্থাৎ ম্যাচ ছিল তাদের মুঠোয়। আর ভারত ছিল প্রবল চাপে।
ঝড় তোলা হেইনরিখ ক্লাসেন ও বিপজ্জনক ডেভিড মিলারের বিপক্ষে ওই ওভারে মাত্র ৪ রান দিয়ে লাগাম টেনে ধরেন বুমরাহ। এক ওভার পর আবার এসে স্রেফ ২ রান খরচ করে একটি অসাধারণ ডেলিভারিতে বোল্ড করে দেন মার্কো ইয়ানসেনকে। তার পাশাপাশি হার্দিক পান্ডিয়া ও আর্শদীপ সিং ডেথ ওভারে নিয়ন্ত্রিত বোলিং করলে অবিশ্বাস্য জয় ছিনিয়ে নেয় ভারত।
Posted ২:২৮ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩০ জুন ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta